বিভিন্ন প্রকার রোজার পরিচয়, রোজা রাখার সঠিক দিন, নিয়ম, সময় সহ বিস্তারিত

বছরজুড়ে যেসব ফজিলতপূর্ণ রোজা রয়েছে সেইসব রোজার পরিচয়, রোজা রাখার সঠিক দিন, নিয়ম, সময় সহ বিস্তারিত.


আশুরার রোজা (নফল)

আশুরা অর্থ দশম ও দশমী, এই দিনে রোজা রাখা নিয়ে কয়েকটি হাদিস বর্ণিত আছে, কিছু হাদিস আপনাদের জন্য আমরা নিন্মে উল্লেখ করেছি, ইসলামের ইতিহাসে আশুরা দ্বারা মহররম মাসের ১০ তারিখ বোঝানো হয়.

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং সেদিন রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। (বুখারি)।
 
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের রোজার পর আশুরার রোজাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। (বুখারি ও মুসলিম)। 

হজরত জাবির ইবনে সামুরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের আশুরার রোজা সম্পর্কে নির্দেশ দিতেন এবং উৎসাহিত করতেন। অতঃপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো; তখন তিনি আমাদের (আশুরার রোজার বিষয়ে) হুকুমও দিতেন না, নিষেধও করতেন না। (মুসলিম)

সওমে দাহার বা বছরব্যাপী রোজা (নফল)

বছরে নিষিদ্ধ পাঁচ দিন তথা রোজার ঈদের দিন, কোরবানির ঈদের দিন ও তার পরের তিন দিন এবং হাজিদের জন্য আরাফাতের দিন ছাড়া অন্য সব দিন নফল রোজা রাখা জায়েজ। সারা বছর রোজা পালন করাকে সওমে দাহার বলে।

আইয়ামে বিজের রোজা (নফল)

আইয়ামে বিজের রোজাকে আদম (আ.) এর রোজা বলা হয়। হজরত আদম (আ.) এবং মা হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় আসার পর প্রথম এই তিনটি রোজা পালন করেন, আর এই রোজার বদৌলতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাহলে তাদের আগের মতো জান্নাতি রূপ–লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে দেন.

‘আইয়াম’ আরবি শব্দ, এর অর্থ হলো দিন সমূহ, চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ, আইয়ামে বিজে রোজা রাখা সুন্নত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত কাতাদাহ (রা.) হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি বলেন, এই সময় রোজা রাখা  এক বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (আবু দাউদ ও নাসায়ি)। 

তবে রমজান মাসের রোজার হুকুম ভিন্ন কারণ রমজান মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা ফরজ তাই রমজানে আইয়ামে বিজের রোজা নেই।

সোমবারের রোজা (নফল)

হজরত আয়িশা (রা.) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। (তিরমিজি ও নাসায়ি)। 

একদিন সাহাবিরা রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি সোমবার রোজা রাখেন কেন? তিনি বললেন, এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে; তাই এই দিন রোজা রাখি।

বৃহস্পতিবারের রোজা (নফল)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে পেশ করা হয়, আমি চাই আমার আমল রোজা অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে উপস্থাপিত হোক (তিরমিজি)

তাসূআর রোজা (নফল)

তাসূআ মানে নবম অথবা নবমী, এখানে তাসূআ বলতে মহররম মাসের ৯ তারিখ বোঝানো হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং অন্য সকলকেও সেদিন রোজা রাখার নির্দেশ দেন তিনি, কিন্তু তিনি যখন মদিনায় হিজরত করেন সেখানকার লোকজন বলতে লাগলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইহুদি–নাসারারাও এই দিনকে সম্মান করে এবং রোজা রাখে, তখন তাদের উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরা আগামী বছর থেকে ৯ তারিখেও রোজা রাখব, ইনশা আল্লাহ (সহি মুসলিম).

শাবান মাসের রোজা (নফল)

হজরত আয়িশা (রা.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এত বেশি নফল রোজা রাখতেন যে  আমরা মনে করতাম তিনি হয়তো আর রোজা ছাড়বেন না, তবে তিনি রমজান মাস ছাড়া আরকোনো মাসে পূর্ণ মাস রোজা পালন করেননি এবং শাবান অপেক্ষা বেশি নফল রোজা অন্য কোনো মাসে পালন করেননি। (বুখারি)।

"ছয় রোজা" শাওয়াল মাসের রোজা (নফল)

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা যেটাকে আমরা ছয় রোজা বলে জানি, এই রোজা একাধারে বা বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা যায়.

হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পালন করল; সে যেন পুরো এক বছর রোজা পালন করল (মুসলিম)

জিলহজ মাসের প্রথম দশকের রোজা (নফল)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এর প্রতি দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমান এবং প্রতি রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের সমান।’ (তিরমিজি)। 

জিলহজ মাসের ১ থেকে ৮ তারিখ পযন্ত সকলে রোজা রাখতে পারবেন। 
৯ তারিখে আরাফাতে অবস্থানকারীরা ছাড়া অন্যরা রোজা পালন করতে পারবেন।
১০ তারিখে অর্থাৎ কোরবানির ঈদের দিনে ভোর থেকে পশু জবাই করা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকলেই রোজা বলে গণ্য হবে এবং এই দিন কোরবানি করা পশুর মাংস দিয়ে প্রথম আহার করা মুস্তাহাব।

"আরাফার রোজা" আরাফা দিবসের রোজা (নফল)

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ, হজের দিন, এই দিন হাজিরা মক্কা শরিফের আরাফা প্রান্তরে অবস্থান করা হজের ফরজত্রয়ের একটি, তাই এই দিনকে ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফা দিবস বলা হয়। এই দিন হাজিরা ছাড়া অন্যদের জন্য রোজা পালন করা সুন্নত। 
আরাফার রোজা সম্পর্কে যে হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে তা নিন্মে উল্লেখ করা হয়েছে 
হজরত কাতাদাহ (রা.) হইতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফা দিবসের রোজা তার আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। (তিরমিজি)।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন