এতো কষ্ট করে কোরবানি করার পর যখন শুনলেন আপনার কোরবানি হয়নি কেমন লাগবে তখন

সাধারণ কিছু ভুলের কারণে আমাদের অদিকাংশ মানুষের কোরবানি কবুল হয়না, জানলে অবাক হবেন, চিন্তা আর আফসোস করবেন এটা তাহলে বুল ছিল., জানুন এবং সতর্ক হন.


কুরবানি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তাআলার নির্দেশ। তিনি কুরআনে এভাবে নির্দেশ করেন ‘সুতরাং (আপনি) আপনার প্রভুর জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ২)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তাআলার নৈকট্য অর্জনের এ ইবাদত পালনের সময় সামান্য একটি ভুলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে কুরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সে কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে মহান আল্লাহ-তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করা জরুরি। কোরবানির সময় অনেকে বিভিন্ন ভুল করে থাকেন। যে কারণে আমরা কোরবানি করেও সওয়াব লাভ তো দূরে থাক তাদের কোরবানি বিশুদ্ধই হয় না।

আসুন একবার দেখে নি যেসব কারণে আমারা কোরবানির করেও সওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে পারি।  

কসাইকে কোরবানির পশুর মাংস দেয়া:

কোরবানির সময় গ্রামে বা শহরে অদিকাংশ মানুষ নিয়মিত সব চেয়ে যেই ভুলটা করে থাকি তা হচ্ছে কসাইকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির পশুর মাংস দেয়া, এটা অনেকে ই করে থাকেন যা একেবারে ই ঠিক নয়, আমাদের দেশের কসাইরাও অনেক চালাক তারা মনে করে একটু কম টাকার কন্ট্রাক্ট করলেও সমস্যা নেয় পাঁচ ছয় কেজি মাংস তো অবশ্যয় ই পাবো তাতে ই তিন হাজার টাকা হয়ে যাবে, যারা কোরবানি করেন তারা সাবধান থাকবেন, কসাইকে আগে থেকে বলে রাখবেন  আপনাকে কোনো মাংস দেয়া হবেনা আপনি আপনার পশ্রমিক কত টাকা নিবেন, আর কসাই যদি গরিব হয় তাহলে আপনি তাকে সেই পরিমান মাংস দিন যা আপনি বাকি গরিবদের সাওয়াবের আসায় আল্লাহ সুবহানাহু তালার রাস্তায় দান করেন, অতিরিক্ত মাংস কসাইকে দেয়া যাবেনা, তবে আপনি চাইলে তার পারিশ্রমিকের চেয়ে একটু বেশি টাকা তাকে ঈদের খুশিতে দিতে পারেন, এতে করে আল্লাহ সুবহানাহু তালাহ খুশি হবেন।

আল্লাহর নামে কোরবানি দেয়া: 

আল্লাহ তয়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তা ভক্ষণ করো না যেগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তায়ালার নাম ব্যতীত অন্যের নামে যবাই করা হয়।

(সূরা আনআম, আয়াত ১২১)।

আমাদের সমাজে ব্যক্তির নামে কোরবানির কথা বলা হয় যেমন অমুকের নামে, বাবার নামে অথবা মায়ের নামে কোরবানি দেব। এমনটা বলা ঠিক নয়। কারণ, কোরবানি একটি আর্থিক ইবাদত, যা হবে আল্লাহর নামে, ব্যক্তির নামে নয়। এজন্য বলা যেতে পারে অমুকের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি।  

নিয়ত বিশুদ্ধ করা: 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তায়ালা প্রবিত্র কোরআনে  ইরশাদ করেন, 

এগুলোর গোস্ত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া।

(সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৭)।

অথচ আমাদের সমাজে অনেকে বিভিন্ন নিয়তে কোরবানি করে থাকি, কেউ কোরবানি করি সামাজিক মর্যাদা হিসেবে। সমাজে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, সুতরাং কোরবানি না দিলে আমার মর্যাদা থাকবে না। কেউ কোরবানি করি চক্ষু লজ্জা থেকে বাঁচতে। কেউ কোরবানি করি গোস্ত খেতে ইত্যাদি ইত্যাদি । এ জাতীয় উদ্দেশে কোরবানি করলে কোরবানি কবুল হবে না।  

হাসিল ছাড়া কোরবানি করা: 

আমরা অনেকে মনে করি বাজার থেকে কোরবানির পশু কিনে হাসিল না দিলে কোরবানি হবে না। এ ধারণা ঠিক নয়, তবে হাসিল হাটের ভাড়া, যারা বাজার ব্যবস্থাপনা করেন এটা তাদের হক, যারা কোরবানির পশুর হাট বসার বেবস্থা করে দেয়ার বিনিময় নিয়ে থাকেন, তাই এ টাকা পরিশোধ করা জরুরি, আপনি হাসিল না দিলে আপনার কোরবানি হবে কিন্তু আপনি বান্দার  হক নষ্ট করার কারণে বড় ধরণের গোনাহগার হবেন।

কোরবানির সময় দাতাদের নাম পাঠ: 

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।’ (সূরা আলা, আয়াত : ৭)।

কোরবানির সময় দাতাদের নাম কাগজে লিখে হাতে নিয়ে পাঠ করাকে অনেকে জরুরি মনে করেন, আমরা এমনও দেখতে পাই কোরবানির পশুকে শুইয়ে চেপে দরে পরে আমরা দাতার নাম সংগ্রহ শুরু করি এটা একেবারে এ ঠিক না, যদি দাতার নাম আগে থেকে রেডি থাকে তাহলে পাঠ করা উত্তম বা মুস্তাহাব কিন্তু আমরা এখন এটাকে ফরজের মতো করে পালন করি এবং এটার জন্য কোরবানির পশুকে কষ্ট দিয়া থাকি এটা একেবারে ই ঠিক না। বরং যাদের পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে তা আল্লাহ তায়ালা ভালো করে জানেন। এক হাদিসে বর্ণিত আছে রাসূল (সঃ) কোরবানি করার সময় নিয়ত করেছেন এমন করে "হে আল্লাহ আমি এই পশুকে আমার, আমার পরিবার এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানি করছি আপনি কোরবানি কবুল করে নিন.

জবাইয়ের আগে লম্বা দোয়া পড়া: 

আমরা অনেকেই এই অজুহাতে কোরবানি করি না যে, আমার তো দোয়া মুখস্থ নেই। অথচ জবাইয়ের আগে হাদীসে বর্ণিত দোয়াটি পড়া উত্তম; জরুরি নয়। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে জবাই করলে পশু জবাই শুদ্ধ হয়ে যাবে। 

(বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫২৩৮)।

যবাইয়ের সময় পশুর চারটি রগের তিনটি কাটা নিশ্চিত করতে হবে: 

অনেক সময় জবাইকারী একটু জবাইয়ের পর কসাই ছোট ছুরি দিয়ে পশুর গলায় ছুরি দিয়ে জোরে আঘাত করেন, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও গর্হিত কাজ। এতে পশু জবাই হলো না বরং আঘাতে হত্যা করা হলো, এজন্য প্রাণীর চারটি রগের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি রগ কাটা নিশ্চিত করতে হবে। চারটি রগ হলো- শ্বাসনালি, খাদ্যনালি ও দুটি রক্তনালি বা শাহরগ।

কোরবানির পশুর ময়লা আবর্জনা,

আমরা অনেকে কোরবানি শেষে পশুর ময়লা আবর্জনা কোরবানির স্থলে পেলে চলে আসি যার কারণে কোরবানির কয়েকদিন পর পযন্ত দুর্গন্ধে মানুষ চলাচল করতে পারেনা, এটি একটি বড় ধরণের গুনাহ, কোরবানি শেষে অবশ্যয় ই চেষ্টা করবেন পশুর ময়লা আবর্জনা মাটির নিচে পুঁতে পেলতে অথবা আপনি যদি শহরে থাকেন তাহলে ময়লাঅবর্জনা নিদির্ষ্ট ডাস্টবিনে পেলবেন যেন ক্লিনার আসে সঠিক সময়ে তুলে নিয়ে যায়। 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দেন করুক, বুল করলে ক্ষমা করে দেবেন আর সঠিক তথ্য কমেন্ট বক্সে লিখতে ভুলবেননা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন